প্রকাশিত: ১৭/০৭/২০১৭ ৮:০৩ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:৩৯ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক:;

মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন শুরুর প্রায় ৯ মাস পর দেশটির সরকার গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো সেখানে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের পরিদর্শনের সুযোগ দিয়েছে। আর এ সুযোগেই সাংবাদিকদের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের বর্ণনা দিয়েছে রোহিঙ্গারা।

মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত নভেম্বর মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকায় ‘রাষ্ট্রহীন’ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ওই অভিযান শুরুর পর থেকে প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে

বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এ দেশে এর আগে থেকেই মিয়ানমারের প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে। এর বাইরে আছে আরো প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা।

জাতিসংঘের তদন্তকারীদের কাছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা ওই দেশে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে দলগত ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলেছে। তাদের ওই অভিযোগ থেকে জাতিসংঘের দূতও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে রোহিঙ্গারা মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার।

নোবেলজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমার সরকার দেশটিতে নিপীড়নের অভিযোগগুলোর বেশির ভাগই অস্বীকার করেছে। এমনকি তারা জাতিসংঘের তদন্তদলকে মিয়ানমারে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

মিয়ানমার সরকার ৯ মাস ধরে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদেরও রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিপীড়নের স্থানগুলোতে যাওয়ার সুযোগ দেয়নি। গত সপ্তাহে মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয় আধাসামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) পাহারায় এক দল দেশি-বিদেশি সাংবাদিককে প্রথমবারের মতো ওই স্থানগুলোতে নিয়ে যায়। সাংবাদিকরা মংডু জেলার বুথিডং শহরে প্রায় দুই দিন অবস্থান করেন। সাংবাদিকরা যে তিনটি রোহিঙ্গা বসতিতে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সেগুলোর একটিতে তাঁদের নিয়ে যায়। মিয়ানমারের কর্মকর্তারা সময়স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে অন্য বসতিগুলোতে সাংবাদিকদের নিয়ে যাননি।

গত শনিবার একটি রাখাইন গ্রামে রোহিঙ্গা নারীরা সাংবাদিকদের কাছে তাঁদের স্বামী, মা ও সন্তানদের কোনো খোঁজ না পাওয়ার কথা জানান।

এক নারী বলেন, ‘আমার সন্তান কোনো সন্ত্রাসী নয়। চাষাবাদ করার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ’

আরো কয়েকজন নারী অভিযোগ করেন, মিথ্যা অভিযোগে তাঁদের স্বামীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমার রোহিঙ্গারা দেশটিতে যে ধরনের নিপীড়নের বর্ণনা দিয়েছিল, এবার রাখাইন প্রদেশে সাংবাদিকরাও সেখানে প্রায় অভিন্ন তথ্য পেয়েছেন।

কায়ার গাউং তাউংয়ের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছে, ওই গ্রামের অন্তত ৩২ জনকে গ্রেপ্তার ও ১০ জনকে মেরে ফেলা হয়েছে। মিয়ানমার বাহিনীর অভিযানের মুখে গ্রামটির প্রায় ছয় হাজার বাসিন্দার অর্ধেকই পালিয়েছে।

লালমতি নামের এক নারী তাঁর বাবাকে হাত-পা বেঁধে আগুনে ছুড়ে পুড়িয়ে মারার বর্ণনা দিয়েছেন। বিচার চাওয়ায় তাঁর মাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

তবে সাংবাদিকরা এসব অভিযোগের বিষয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের ভাষ্য নেওয়ার কোনো সুযোগ পাননি।

এর আগে গত শুক্রবার মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থরা সন লুইন এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগে কিছু গ্রামবাসীকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে খবর এসেছে, আমরা বাড়িঘরে আগুন দিয়েছি, ধর্ষণ হয়েছে। ওরা (গ্রামবাসী) ভুল তথ্য দিয়েছে। ’

গত অক্টোবরের পর থেকে অন্তত ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়েছে বলে জাতিসংঘ যে তথ্য দিয়েছে এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন ওই কর্মকর্তা। তাঁর দাবি, স্থানীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিখোঁজের সংখ্যা মাত্র ২২ হাজার।

মিয়ানমারের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, সেখানকার ঘটনাগুলোর ব্যাপারে অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলছে। এর একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিয়ন্ত সুয়ে, অন্যটি জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে কমিশন। কর্মকর্তাদের দাবি, মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়নি তাঁদের। তাঁরা কেবল রাখাইন রাজ্যের সমস্যা সমাধানের সম্ভাব্য উপায়গুলোর ব্যাপারে সুপারিশ করবেন। সুত্র : কালেরকন্ঠ

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গাদের ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিভাগ এবং ইউএসএআইডিয়ের মাধ্যমে কক্সবাজার, ভাসানচর এ অঞ্চলের ...